1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

লাঠিটিলা বনে আবারও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১১৯ বার পঠিত

জুড়ী প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে আবারও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে বিরল প্রজাতির চশমাপড়া হনুমান। শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) রাতে স্থানীয়রা লাঠিছড়ার পাশে সড়কে ছোট একটি চশমাপরা হনুমান শাবক হাউ মাউ করে কান্না করছে দেখতে পান। আর ছড়ায় একটি হনুমানকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা। এভাবে প্রতিনিয়ত বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটলে একসময় প্রকৃতিতে প্রয়োজনীয় এ সকল বন্যপ্রাণী বন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা এবং এটি ঘটলে লাঠিটিলা বনের জীব-বৈচিত্র্যর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরা মায়ের দুধ পান করে বেঁচে থাকে। মায়ের দুধ পান করতে না পারলে এরকম ছোট শাবক গুলো বাঁচানো কঠিন। এরা মায়ের স্পর্শ ছাড়া বাঁচে না।

লাঠিটিলার বন্যপ্রাণী রক্ষায় বিদ্যমান আবরণ বিহীন খোলা বৈদ্যুতিক তার সরিয়ে রাবার মোড়ানো কিংবা অন্য কোন বিদ্যুৎ অপরিবাহী মাধ্যমের আবরণযুক্ত তার সংযোজন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (মৌলভীবাজার) বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী গত ১৯ ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) একটি লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।

ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সীমান্তঘেষা পাথারিয়া হিল রিজার্ভের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলের অভ্যন্তরসহ আশ-পাশের বিদ্যুতায়িত এলাকায় বর্তমান ১১ হাজার কেডি হাইভোল্টেজের বিদ্যু লাইনে কোন আবরণ না থাকায় প্রায় দু’এক মাস অন্তর অন্তরই দু একটি করে মূল্যবান বিরল প্রজাতির স্তন্যপায়ী বন্যপ্রানী যেমন- মুখপোড়া হনুমান, চশমাপড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর ইত্যাদি বনাঞ্চল ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিচরনের সময় বৈদ্যুতিক তারে মারাত্মকভাবে বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় লাঠিটিলার মিশ্র চিরসবুজ সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির বিদ্যমান বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী বন্যপ্রানীসহ সেখানকার সার্বিক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণের স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে উক্ত বনভূমি ও বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালিত বৈদ্যুতিক তারের লাইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এবং বিদ্যমান আবরণ বিহীন খোলা তার সরিয়ে রাবার মোড়ানো কিংবা অন্য কোন বিদ্যুৎ অপরিবাহী মাধ্যমের আবরণযুক্ত তার সংযোজন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, লাঠিটিলা বনে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর একটি করে দুটি চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বনের কাছে অবস্থিত দিলখুশ চা-বাগান এলাকায় সড়কের পাশে মৃত অবস্থায় একটি চশমাপরা হনুমান শাবককে পাওয়া গিয়েছ। সেটিরও মৃত্যু হয়েছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্টে। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারী লাঠিটিলা বনের কমলছড়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি প্রাপ্তবয়স্ক চশমাপরা হনুমান মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। এর আগে একইভাবে বিরল প্রজাতির একটি লজ্জাবতী বানরও লাঠিটিলা বনের ডোমাবাড়ি সংলগ্ন বিজিবি ক্যাম্পের অদূরে বিদ্যুতিক তারে ঝলসে গিয়ে মারা যায়। এভাবে একের পর বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, চিরসবুজ লাঠিটিলা বনটি একটি সমৃদ্ধ বন। এখানে উল্লুক, হনুমান, লজ্জাবতি বানর, হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসতি রয়েছে। বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রতিনিয়ত চশমাপরা হনুমানগুলো মারা যাচ্ছে। এই বনের অনেক যায়গায় বনের মধ্য দিয়ে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন। সেজন্য প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে অনেক ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এই বিষয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ না গ্রহণ করলে অচিরেই লাঠিটিলা বনের প্রাণীকুল ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার পল্লী বিদুৎ সমিতি (পবিস) এর বড়লেখা জোনাল অফিসের ডিজিএম মো: সুহেল রানা চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আগেরবার একটা হনুমান মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আমরা ঐ এলাকায় আবরণযুক্ত তার লাগানোর জন্য প্রস্তাবসহ সেটির ডিজাইন রেডি করে হেড অফিসে পাঠিয়েছিলাম। এটার অনুমোদন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ঐ এলাকায় আবরণযুক্ত বৈদ্যুতিক তার লাগানো হবে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকতা ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হনুমানের মৃত্যুর বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখতেছি।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ফরেস্ট একাডেমী চট্টগ্রামের পরিচালক ও বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সার্কেলের সাবেক বন সংরক্ষক ড. মোল্লা রেজাউল করিম বলেন, লাঠিটিলা বনে এভাবে একের পর এক বিরল প্রজাতির প্রাণী মারা যাচ্ছে সেটা খুব দুঃখজনক বিষয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা সমগ্র জাতির জন্য প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যত কোন ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি। যাদের গাফিলতি ও অবহেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতায় আনা দরকার। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে একটা মামলা করে দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া একটা রিট করতে পারলে স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাবে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..